নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস উপলক্ষ্যে যুব উন্নয়ন সংস্থা-ঢাকা’ মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নর্দান মেডেকিল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ও র্যালিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আব্দুর রব।
যুব উন্নয়ন সংসদ-ঢাকা এর মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি অধ্যাপক ডঃ মোবারক হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, টেকেরহাট দরবারের পীর বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন মাওলানা কামরুল ইসলাম আনসারী, সাবেক সচিব মাহবুবুল হক, জাতীয় ফুটবলার ও ফেডারেশনের সাবেক অধিনায়ক কায়সার হামিদ,যুব উন্নয়ন সংদ এর সভাপতি মোহাম্মদ কামাল হোসেন , জুলাই আন্দোলনের অন্যতম বীর সিগবাতুল্লাহ ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. আব্দুর রব বলেন, মাদক শুধু একজন ব্যক্তি কিংবা পরিবারকেই ধ্বংস করে না, বরং এটি সমাজ ও রাষ্ট্রকেও ধ্বংস করছে। ব্রিটিশরা তাদের স্বার্থ রক্ষায় মানুষের মাঝে মাদক জড়িয়ে দিয়েছে। যাতে করে মানুষের চিন্তা জ্ঞান লোপ পায়। বাংলাদেশে কিছু দুষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মাদকের জোগানদাতা। কক্সবাজারের সাবেক এমপি বদি এই মাদক দিয়ে কত মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে তা সীমাহীন। রাষ্ট্রের গতিশীলতা বিনষ্ট করতে যুব সমাজকে মাদকের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। দরকার রাষ্ট্রের প্রয়োজনে, নিজের প্রয়োজনে, ঐক্যবদ্ধ জাতি দরকার। প্রত্যেক ইউনিয়নের ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণ নয়, মাদকের মূল উৎখাতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
টেকেরহাট দরবারের পীর কামরুল ইসলাম আনসারী বলেন, সূরা আল মায়েদার ৩১ নং আয়াতে স্পষ্ট মাদককে হারাম করেছে। যা নেশা সৃষ্টি করে, মানুষের মস্তিষ্কের পরিবর্তন ঘটায় তাই মাদক, তাই হারাম। অগ্নিকান্ডে কিংবা প্রাকৃতিক দূর্যোগে যা ক্ষতি হয় তারচেয়ে বহুগুণ বেশি সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করে মাদক। তিনি দেশের প্রতিটি নাগরিকে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সাবেক সচিব মামুনুল হক বলেন, মাদক বিরোধী দিবসে আমাদের একটাই দাবি মাদক মুক্ত দেশ গড়ে তুলতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে।
ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক অধিনায়ক কায়সার হামিদ বলেন, তরুণ যুব সমাজকে মাদক যেভাবে আক্রোশ করছে এটি জাতির জন্য বিপজ্জনক। মাদকের সঙ্গে এমন এমন ব্যক্তি জড়িত যা রাষ্ট্রের জন্য হুমকি। তরুণ যুব সমাজকে মাদক থেকে ফেরাতে সরকার কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করতে তিনি আহ্বান জানান।
যুব উন্নয়ন সংসদ এর সভাপতি মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, আল্লাহ কুরআনে মাদককে হারাম ঘোষণা করেছন। দেশে প্রায় ১ কোটি মাদকাসক্ত রয়েছে। সরকারের রিপোর্টের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। দেশ ও জাতির কল্যাণে যুব সমাজের বিকল্প নেই। তাই যুব সমাজকে নৈতিক ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। একজন মাদকাসক্ত দৈনিক ১০০ টাকা মাদকের পিছনে খরচ করলে দৈনিক ১০০ কোটি টাকা মাদক কারবারিদের পকেটে চলে যায়, অর্থনীতি থেকে হারিয়ে যায়। নতুন বাংলাদেশকে গড়তে তিনি মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
জুলাই বিপ্লবের অন্যতম বীর সিগবাতুল্লাহ বলেন, একটি সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে মাদকের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে টার্গেট করে মাদক পাচার করে থাকে। অতীতে মাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখা যায়নি। কারণ মাদকের সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক নেতারা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মাদকের সঙ্গে মন্ত্রী, এমপি, কিংবা উপজেলা স্তরের জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত। তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বিপ্লবী সরকার উল্লেখ করে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মাদকাসক্তের মধ্যে ৮০ শতাংশ যুব সমাজ। আমাদের দেশে এখন মাদকের সব দ্রব্য ও উপাদান পাওয়া যায়। যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত তারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক। মাদকের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে হলে রাষ্ট্রকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল জাতিকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে মাদক মুক্ত দেশ গড়ার। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মাদক কারবার চলবে না এটা রাজনৈতিক দলগুলোইকে ঘোষণা দিতে হবে।